প্রাইভেট ডিটেকটিভ ডেস্কঃ
জাতীয় প্রেস ক্লাবে হঠাৎই পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি। গতকাল বেলা পৌনে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। অবশ্য সকাল ১০টা থেকেই প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ছিল এই কর্মসূচি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের আগমুহূর্তে ছাত্রদলের এক নেতাকে ধরতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির ভিতর চলে যায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান খান রাজকে চ্যাংদোলা করে ধরে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপরই শুরু হয় হুড়োহুড়ি। নেতা-কর্মীরা দৌড়াতে শুরু করেন। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে বিএনপির সিনিয়র চার নেতা ফুটপাথে পড়ে যান। রাজসহ তিনজনকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। মুহূর্তেই পণ্ড হয়ে যায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি। এর প্রতিবাদে আগামীকাল রাজধানীতে থানায় থানায় প্রতিবাদ মিছিল ডেকেছে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদের মাধ্যমে বক্তব্য শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা মোরতাজুল করিম বাদরু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, আফরোজা আব্বাস, কাজী আবুল বাশার, শহীদুল ইসলাম বাবুল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বক্তৃতা করেন। আদালতে ব্যস্ততা থাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ব্যত্যয় ঘটিয়ে আগেই বক্তৃতা দিয়ে চলে যান।
এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক বক্তব্য দেন। পৌনে ১২টায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তখনো বক্তব্য দেওয়ার বাকি ছিলেন বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সব শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু ডা. জাহিদের বক্তব্যের এক-দুই মিনিট যেতে না যেতেই গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা সমাবেশের পশ্চিম অংশ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রদল সভাপতি মিজানুর রহমান খান রাজকে ধরে টেনেহিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যেতে শুরু করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তার গলার শ্বাসনালিতেও হাত দিয়ে জাপটে ধরেন তারা। এ সময় তার গায়ে থাকা সাদা শার্ট ছিঁড়ে যায়। নিজেকে রক্ষা করতে দলের মহাসচিবের কাছে চলে আসেন রাজ। মহাসচিব তাকে হাত দিয়ে আগলে ধরে রাখেন। কিন্তু পুলিশ তাকে টেনেহিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যায়। এ সময় শুরু হয় হুড়োহুড়ি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়াও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবদিন ফারুক, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল মতিনসহ সিনিয়র নেতারা ফুটপাথে পড়ে যান। হুড়োহুড়ি চলতেই থাকে। এরই মধ্যে পুরো এলাকা পুলিশ ঘিরে ফেলে।
এ সময় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী মাইকে বলতে থাকেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা, আপনারা এসব কী করছেন! আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূূর্ণভাবে পালন করতে দিন।’ নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মাইক হাতে নিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘পুলিশ সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। আমি ধিক্কার জানাচ্ছি, এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, দায়ী ব্যক্তিদের আমি অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এই সরকারের পদত্যাগও দাবি করছি।’
ঢাকায় কাল প্রতিবাদ মিছিল : অবস্থান কর্মসূচি পুলিশ ‘পণ্ড করে দেওয়ায়’ আগামীকাল রাজধানীর থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামী ১০ মার্চ শনিবার ঢাকা মহানগরীর সব থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেত্রী কারাগারে যাওয়ার পর থেকে আমরা একেবারেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি। সেই কর্মসূচিতে তারা (পুলিশ) অনুপ্রবেশ করে পরিকল্পিতভাবে আমরা যেন ভবিষ্যতে আর কোনোভাবে কর্মসূচি করতে না পারি সেই পরিবেশ সৃষ্টি করছে।’ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করায় সরকারের গাত্রদাহ হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন দলের মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘পুলিশ নিজেই উসকানি দিয়ে কর্মসূচি বানচাল করে দিচ্ছে। বেআইনিভাবে কর্মসূচির ভিতর থেকে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে। যে কজনকে সম্প্রতি যে পদ্ধতিতে গ্রেফতার করা হয়েছে, কোনো স্বাধীন দেশে এভাবে গ্রেফতার করা হয় বলে আমরা কখনো শুনিনি, দেখেনি। একমাত্র তুলনা হতে পারে সেই হিটলারের গেসটাপো বাহিনীর সঙ্গে বা অন্য ডিকটেটরদের সঙ্গে।’ মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে বেছে বেছে নেতাদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মসূচির ভিতর ঢুকে পাশাপাশি থেকে স্লোগান দেয় আমাদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তারপর তারা নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।’ গত এক মাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানসহ সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তা না হলে যে পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, আবদুল মতিন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৯মার্চ২০১৮/ইকবাল